গঙ্গা হল পুণ্যদায়িনী। এটা আমরা সকলেই জানি। তাই আমরা সকলেই গঙ্গা স্নান করে থাকি পুণ্য লাভের আশায়। আবার বাঙালির সমস্ত পূজোতে গঙ্গা জল, গঙ্গা মাটি অবশ্য প্রয়োজনীয়। আর কিছু বিশেষ বিশেষ তিথিতে যদি গঙ্গা স্নান করা যায় তাহলে অনেক পুণ্য সঞ্চয় করা যায়।গঙ্গার জন্ম কাহিনি বিষয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে মত বিরোধ রয়ছে। একটি কাহিনি অনুযায়ী ব্রহ্মার কমণ্ডলু এক নারীমূর্তির স্বরূপ প্রাপ্ত হয়, ইনিই গঙ্গা। বৈষ্ণব মতানুসারে, ব্রহ্মা তার কমণ্ডলুর জল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে বিষ্ণুর পদ ধৌত করেছিলেন। সেই থেকেই গঙ্গার জন্ম।
তৃতীয় একটি মত অনুযায়ী, গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয় ও তার পত্নী মেনকার কন্যা এবং পার্বতীর ভগিনী। তবে প্রতিটি মতেই একথা স্বীকৃত যে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পবিত্র করে তাকে স্বর্গে উত্তীর্ণ করেন।হিন্দুদের কাছে মা গঙ্গা দেবী রূপে পূজিত হন। এই গঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় নগর যেমন- পাটলিপুত্র, কনৌজ, কাশী, এলাহাবাদ, মুর্শিদাবাদ, মুঙ্গের ও কলকাতা এই নদীর তীরেই অবস্থিত। তবে মনে করা হয়, আদি বৈদিক যুগ বা ঋগ্বেদের যুগে গঙ্গা নয়, সিন্ধু ও সরস্বতী নদীই ছিল পবিত্র নদী। মৌর্য থেকে মুঘল সাম্রাজ্য পর্যন্ত অধিকাংশ ভারতীয় সভ্যতারই প্রাণকেন্দ্র ছিল গাঙ্গেয় সমভূমি।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন গঙ্গায় স্নান করলে সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং জীব মুক্তিলাভ করে। অনেকে আত্মীয়স্বজনের দেহাবশেষ বহু দূরদূরান্ত থেকে বয়ে এনে গঙ্গায় বিসর্জন দেন; তারা মনে করেন, এর ফলে মৃত ব্যক্তির আত্মা স্বর্গে গমন করেন। গঙ্গার তীরবর্তী বহু স্থান হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী পবিত্র। এর মধ্যে রয়েছে হরিদ্বার, এলাহাবাদ, বারাণসী, নবদ্বীপ, গঙ্গাসাগর প্রভৃতি। থাইল্যান্ডের লয় ক্রাথং উৎসবে পূণ্যার্থীরা নদীতে প্রদীপযুক্ত ছোটো ছোটো নৌকা ভাসিয়ে বুদ্ধ ও গঙ্গা দেবীকে শ্রদ্ধা জানান।
তবে বাড়িতেই নিয়ম মেনে মন্ত্র পাঠে লাভ করতে পারেন গঙ্গা স্নানের মত পুণ্য। এবার জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়ম গুলি-“শাস্ত্র মতে, গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী।নর্মদে সিন্ধু কাবেরী জলস্মিনসন্নিদ্ধিম কুরু।।” এই মন্ত্র পাঠ করে বাড়িতে স্নান করলেই পাবেন গঙ্গাস্নান সমান পূণ্য। সেই সঙ্গে স্নানের জল ভরার সময় তর্জণী স্পর্শ করে ত্রিভুজ কাটুন ও ইষ্ট দেবতাকে স্মরণ করুন। আর পান বাড়িতেই গঙ্গা স্নানে পুণ্য।