সতী দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার আর এক রূপ। তিনি ছিলেন শিবের প্রথমা স্ত্রী।দক্ষযজ্ঞের সময় পিতা দক্ষ প্রজাপতি কর্তৃক স্বামীর অসম্মান সহ্য করতে না পেরে প্রাণত্যাগ করেন সতী।সতীর মৃত্যুর পর নিথর দেহ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে প্রলয়নৃত্যে মেতে উঠেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব। তাঁর পদাঘাতে কাঁপছিল উঠেছিল স্বর্গ থেকে মর্ত্য, পাতাল পর্যন্ত। মহাদেবের চোখ ক্রোধের আগুনে পলাশের লালা আভায় পূর্ণ্য । তাঁর দীর্ঘনিঃশ্বাসের বাষ্পে পুড়ে যাচ্ছিলো ত্রিভুবন। ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছিল স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে। এই ধংস রুখতে দেবতাদের অনুরোধে এগিয়ে এসেছিলেন শ্রীবিষ্ণু। তাঁর সুদর্শন চক্রের দ্বারা সতীর দেহ ছিন্নভিন্ন করেছিলেন ।
হিন্দুরা আজও বিশ্বাস করেন, কাটাসকুণ্ড হল সেই হ্রদ। মহাদেবের চোখের জলে অবগাহন করলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই বিশ্বাসে শত শত বছর ধরে সনাতন ধর্মের মানুষেরা ছুটে আসেন কাটাসকুণ্ডে। যে কাটাসকুণ্ডকে স্থানীয় মানুষের কাছে ‘চশমে আজম’ নামে পরিচিত।ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেবের , রক্তচক্ষু থেকে গড়িয়ে পড়েছিল দু’ফোঁটা চোখের জল। এই দু ফোটা চোখের জল থেকে তৈরি হয়েছিল দুটি তীর্থক্ষেত্র। এক ফোঁটা পড়েছিল রাজস্থানের আজমেঢ়-এ। তৈরি হয়েছিল হিন্দুদের পবিত্র তীর্থ পুস্কর। অপর ফোঁটা পড়েছিল, বর্তমান পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের এক ঊষর পাহাড়ি ভূখন্ডে। সৃষ্টি হয়েছিল আর এক পবিত্র হ্রদ ‘কাটাসকুণ্ড’। ‘কাটাস’ শব্দের অর্থ চোখের জল।
মহাভারতের ‘যক্ষপ্রশ্ন‘ অধ্যায়ে একটি হ্রদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে হ্রদের তীরে তৃষ্ণার্ত পাণ্ডবদের ধাঁধাঁর লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন যক্ষ। আর ধাঁধাঁর উত্তর না দিতে পেরে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ধাঁধার লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছিলেন যক্ষকে। প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন তাঁর চার ভাইয়ের।পাকিস্তানের চকওয়াল জেলার কাল্লার কাহারে, আজও আছে ‘কাটাসকুণ্ড’। পবিত্র কাটাসকুণ্ডের পাশে আজও আছে ‘পাণ্ডব কুঁয়া”। দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাণ্ডবরা এই কুয়ো থেকেই নিতেন। পবিত্র কাটাসকুণ্ডকে ঘিরে আছে ‘সপ্তগ্রহ’ বা সাতটি মন্দির এবং একটি বৌদ্ধ স্তুপ। এই সাতটি মন্দিরের মধ্যে আছে রাম, সীতা ও হনুমানের মন্দিরও। মন্দিরগুলির ভিতরের কারুকার্য অসম্ভব সুন্দর।
তবে, মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরটি হলো একটি শিবমন্দির। স্থানীয় লোকগাথা থেকে জানা যায়, পবিত্র এই হ্রদটির তীরে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লালপাথরের এই সুদৃশ্য শিবমন্দির। যা আজ ‘কাটাসরাজ’ শিবমন্দির নামে বিখ্যাত। মন্দিরের ভেতর আছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। যা শ্রীকৃষ্ণ নিজে হাতে পাথর কুঁদে তৈরি করেছিলেন। পাকিস্তানের উর্দুভাষী মানুষ এই জাগ্রত শিবমন্দিরটিকে চেনেন ‘কিলা কাটাস‘ নামে। যার অর্থ কাটাসরাজ শিবের দুর্গ। ইতিহাসবিদদের মতে, গান্ধারের হিন্দুশাহীর আমলে তৈরি হয়েছিল কাশ্মীরি স্থাপত্যের এই মন্দিরগুলি। বৌদ্ধ স্তুপটি সম্ভবত তৈরি হয়েছিল সম্রাট অশোকের আমলে। স্থানীয় গাইডরা পর্যটকেদের বলেন, মন্দিরের বয়স ৩৫০০ বছর। অপরদিকে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম লিখে গিয়েছেন, কাটাসরাজ মন্দিরটি ৬৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল।
মহাভারতের ‘যক্ষপ্রশ্ন‘ অধ্যায়ে একটি হ্রদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যে হ্রদের তীরে তৃষ্ণার্ত পাণ্ডবদের ধাঁধাঁর লড়াইয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন যক্ষ। আর ধাঁধাঁর উত্তর না দিতে পেরে প্রাণ হারিয়েছিলেন ভীম, অর্জুন, নকুল ও সহদেব। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ধাঁধার লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছিলেন যক্ষকে। প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন তাঁর চার ভাইয়ের।পাকিস্তানের চকওয়াল জেলার কাল্লার কাহারে, আজও আছে ‘কাটাসকুণ্ড’। পবিত্র কাটাসকুণ্ডের পাশে আজও আছে ‘পাণ্ডব কুঁয়া”। দৈনন্দিন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জল পাণ্ডবরা এই কুয়ো থেকেই নিতেন। পবিত্র কাটাসকুণ্ডকে ঘিরে আছে ‘সপ্তগ্রহ’ বা সাতটি মন্দির এবং একটি বৌদ্ধ স্তুপ। এই সাতটি মন্দিরের মধ্যে আছে রাম, সীতা ও হনুমানের মন্দিরও। মন্দিরগুলির ভিতরের কারুকার্য অসম্ভব সুন্দর।
তবে, মন্দিরগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত মন্দিরটি হলো একটি শিবমন্দির। স্থানীয় লোকগাথা থেকে জানা যায়, পবিত্র এই হ্রদটির তীরে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লালপাথরের এই সুদৃশ্য শিবমন্দির। যা আজ ‘কাটাসরাজ’ শিবমন্দির নামে বিখ্যাত। মন্দিরের ভেতর আছে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ। যা শ্রীকৃষ্ণ নিজে হাতে পাথর কুঁদে তৈরি করেছিলেন। পাকিস্তানের উর্দুভাষী মানুষ এই জাগ্রত শিবমন্দিরটিকে চেনেন ‘কিলা কাটাস‘ নামে। যার অর্থ কাটাসরাজ শিবের দুর্গ। ইতিহাসবিদদের মতে, গান্ধারের হিন্দুশাহীর আমলে তৈরি হয়েছিল কাশ্মীরি স্থাপত্যের এই মন্দিরগুলি। বৌদ্ধ স্তুপটি সম্ভবত তৈরি হয়েছিল সম্রাট অশোকের আমলে। স্থানীয় গাইডরা পর্যটকেদের বলেন, মন্দিরের বয়স ৩৫০০ বছর। অপরদিকে ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম লিখে গিয়েছেন, কাটাসরাজ মন্দিরটি ৬৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল।
ইতিহাসবিদরা বলেছেন, গুরু নানকদেব নিয়মিত আসতেন কাটাসরাজ শিবমন্দিরে। লাহোরকে ঘিরে গড়ে ওঠা শিখ সাম্রাজ্য ‘সরকার-ই-খালসা’র সম্রাট রণজিৎ সিংহের খু্ব প্রিয় জায়গা ছিল এই ‘কাটাসরাজ’ শিবমন্দির। তিনিও নিয়মিত আসতেন এই শিব মন্দিরে। ঘন্টার পর ঘন্টা ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকতেন শিবলিঙ্গের সামনে। আজও মন্দিরের কাছেই আছে তাঁর সেনাপতি হরি সিং নওলার হাভেলি। কাটাসরাজ দর্শনে এসেছিলেন, আল-বিরুনী, ফা হিয়েন ও হিউএন সাং। তাঁদের লেখায় নিঁখুতভাবে ধরা পড়েছে সেই সময়ের কাটাসরাজ মন্দিরের পরিবেশ।
স্বাধীনতার আগে, অবিভক্ত পাঞ্জাবের দ্বিতীয় বিখ্যাত হিন্দু তীর্থ ক্ষেত্র ছিল কাটাসরাজ শিবমন্দির। হিমাচল প্রদেশের জ্বালামুখীর পরেই। প্রত্যেক বছর নবরাত্রির সময় কাটাসরাজ মন্দিরে বিশাল মেলার আয়োজন করা হতো। সেই সময় শুরু হতো জাগ্রত শিব ‘কাটাসরাজের’ বাৎসরিক তীর্থ যাত্রা। কিন্তু ভারত ভাগ হওয়ার পর, পাকিস্তানের বেশিরভাগ হিন্দু ভারতে চলে আসার ফলে, আঁধার নেমে এসেছিল কাটাসরাজ শিবমন্দিরে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নিত্যপূজা।
১৯৯২ সালে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর উত্তেজিত পাকিস্তানি জনতা কাটাসরাজের মন্দির ভাঙার চেষ্টা করেছিল। সমস্ত আক্রোশ গিয়ে পড়েছিল রাম ও হনুমানের মন্দির ও বিগ্রহদুটির উপর। লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল বিগ্রহ দুটিকে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবেই অক্ষত থেকে গিয়েছিলেন কাটাসরাজ শিব। সামান্যতম আঁচড়ও পড়েনি শিবলিঙ্গের গায়ে। তারপর থেকে অযত্নে পড়ে ছিল কাটাসরাজ মন্দির। পবিত্র কুণ্ডটির আশপাশ, মন্দির চত্বর ভরে গিয়েছিল ঝোপঝাড়ে।
ভারতের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবানী, ২০০৫ সালে গিয়েছিলেন কাটাসরাজ মন্দিরে। হিন্দুদের পবিত্রতম মন্দিরের শোচনীয় অবস্থা দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। নড়েচড়ে বসেছিল পাকিস্তান সরকার। ফের ঝাড়পোঁছ শুরু হয়েছিল মন্দিরে। পরিস্কার করা শুরু হয়েছিল শ্যাওলা জমা কাটাসকুণ্ড।কাটাসরাজ শিবমন্দিরে নওয়াজ শরিফ। কয়েকমাসের মধ্যেই আবার ঝোপঝাড়ের ভেতর হারিয়ে গিয়েছিল কাটাসরাজ শিবমন্দির
২০১৬ সালে, পাকিস্তানের মিডিয়ার শিরোনামে এসেছিল একটি লাইন,”অবহেলায় শুকিয়ে যাচ্ছে হিন্দুদেবতা মহাদেবের চোখের জলে তৈরি কাটাসকুণ্ড।” পাকিস্তানের মসনদে তখন নওয়াজ শরিফ। খবরটি দেখে, নওয়াজ শরিফ একদিন সরাসরি চলে গিয়েছিলেন কাটাসরাজ শিবমন্দিরে। তাঁর আগ্রহে আবার জেগে উঠেছিল কাটাসরাজ শিবমন্দির চত্বর। ২০১৭ সালে ভারত থেকে প্রায় ২০০ তীর্থ যাত্রী ‘কাটাসরাজ ধাম’ যাত্রায় অংশগ্রহণও করেছিলেন। তারপর নওয়াজ শরিফ মসনদচ্যুত হওয়ার পর আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ‘কাটাসরাজ ধাম’ যাত্রা। অন্ধকার গ্রাস করেছিল ‘কিলা কাটাস’কে।তবে কাটাসরাজ শিবমন্দির চত্বরে আর ঝোপঝাড় হতে দেননি স্থানীয় মুসলিম গ্রামবাসীরা। তাঁদের ইচ্ছাতেই কাটাসরাজ শিবমন্দির আজ একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কাটাসরাজ শিবমন্দিরের আশপাশের পাহাড়গুলিতে উচ্চমানের চুনাপাথর পাওয়া যায়। ফলে কাল্লার কাহার অঞ্চলে তৈরি হয়েছে অনেক বড় বড় সিমেন্ট কোম্পানি। তারা দ্রুত তুলে নিচ্ছে মাটিতে থাকা জল। যার আঘাত সরাসরি গিয়ে পড়েছে, কাটাসকুণ্ডের ওপরে। শুকিয়ে যেতে বসেছে পবিত্র কাটাসকুণ্ড।পাকিস্তানের চিফ জাস্টিস মিয়াঁ সাকিব নিসার এই সংক্রান্ত একটি মামলার রায়ে বলেছিলেন, “এই মন্দির কেবলমাত্র হিন্দুদের কাছে পবিত্র নয়, এটা পাকিস্তানের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের এটি রক্ষা করতেই হবে।” কিন্তু কোথায় কী, পাকিস্তানে সরকার আসে, সরকার যায়। পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কিছুই।