২৫শে বৈশাখ ভারতের প্রথম নোবেলজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মবার্ষিকী। গোটা বিশ্বের কাছে তিনি পরিচিত ‘গুরুদেব’ নামে।তাঁর গানের সুরে, কবিতার পঙক্তিতে, গল্পের অক্ষরে আজও মজে রয়েছে বাঙালি। তিনি কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের আদি পদবি ছিল ‘কুশারী’। তারা ছিলেন শাণ্ডিল্য গোত্রের ব্রাহ্মণ। আগেকার দিনে নিচু শ্রেণির হিন্দুরা ব্রাহ্মণদের অনেক সময় ‘ঠাকুর’ বলতেন, এভাবেই তাদের পদবি ‘ঠাকুর’ হয়ে যায়।
অনেকেই হয়ত জানেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু এ দেশের জন্যই নয়, আরও ২টি দেশের জন্য জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। যার মধ্যে একটি হল বাংলাদেশ। ওখানকার জাতীয় সঙ্গীত হল ‘আমার সোনার বাংলা’। তবে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতও যে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে নেওয়া, এই তথ্য হয়ত কারোর জানা নেই। শ্রীলঙ্কার খ্যাতমান সংগীত ব্যক্তিত্ব আনন্দ সামারাকুন ১৯৩০ সালে বিশ্বভারতীতে চারুকলা ও সংগীত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য পান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রিয় ছাত্র আনন্দ সামারাকুনের জন্য বাংলা ভাষায় ‘নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি রচনা করেন এবং এর সুর দেন। সামারাকুন তারপর ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান এবং সিংহলি ভাষায় গানটি অনুবাদ করেন। যার প্রথম লাইন হচ্ছে ‘নমো নমো মাতা আপা শ্রীলঙ্কা নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রী বরণী’। ১৯৫১ সালে শ্রীলঙ্কায় এই গানটি জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
১৯৩০–৩১ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মোট চারবার দেখা হয়েছে আইনস্টাইনের।আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথ দু’জনেই সঙ্গীত চর্চা সহ বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। আইনস্টাইনের বিষয়ে লিখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,‘তাঁর মধ্যে কোনও কঠিন কিছু নেই, তিনি বোদ্ধাদের মতন উদাসীনও নন। আমার কাছে আইনস্টাইন এমন এক ব্যক্তি যিনি মানববন্ধনকে গুরুত্ব দেন। তিনি আমার বিষয়ে প্রকৃত আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং আমাকে বুঝতে পেরেছেন।’ আইনস্টাইন খোশমেজাজে থাকতে ভালবাসতেন। যে কোনও মানবিক সম্পর্ককেই মূল্য দিতেন।রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বপথিক বললে ভুল হবে না। খুব কম কবিই জীবদ্দশায় ৩০টি দেশ ঘুরতে পারেন। আসলে অন্তরে তিনি ছিলেন বিশ্বমানব।
গান্ধীজি এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যে বিশেষ একটি সম্পর্ক ছিল, তা সকলেরই জানা। কিন্তু অল্প কয়েকজনই জানেন, গান্ধীজি তথা জাতির জনককে ‘মহাত্মা’ উপাধিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই দেওয়া। ১৯১৯ সালের ৩১ মে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশের দেওয়া নাইটহুড উপাধি ত্যাগ করেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।